এটা সজলের জীবনের সত্যি ঘটনা ।
একদিন ফেইসবুক এ ঢুকে দেখি একটা মেয়ে আমাকে ফ্রেইন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ছে, আমি একসেপ্ট করি।
মেয়েটা আমাকে মেসেজ করে, আর বলে আমার খুব ভালো বন্ধু হতে চায়, আমি রাজি হলাম, কিন্তু আমি অবাক হই আমার ছবিতে মেয়েটার কমেন্টস দেখে,
যেন তার সাথে আমার শত্রুতা আছে , এমন কমেন্টস করে যাতে সবার কাছে একটু হেওপন্য হই, কেন এমন করে আমার সাথে বুঝতে পারছিনা, আমি তাকে মেসেজ করলাম এর কারন জানতে চেয়ে, তেমন কিছু বললনা, শুধু বলল আমাকে এমন করতে তার ভালো লাগে।
এভাবে একটু একটু কথা বলতে বলতে কথার মাত্রা দিন দিন বাড়তে থাকে,
৫ মিনিট, ১০ মি.করতে করতে একসময় দীর্ঘ সময় চ্যাটিং করতাম, পরিচয়টা কখনোই বলতে চাইতো না, একদিন মেয়েটা বলে
চ্যাটিং এ এত কথা বলা যায় না, নাম্বার দেন ফোনে কথা বলি।
আমিও কিছু না ভেবেই দিয়ে দিলাম,
দুইদিন পরে ফোন করে মেয়টা, আমি কেন তাকে ফোন করিনি খুব রাগের সাথে জিগ্যেস করে,
তারপর কথা হয় প্রতিদিন, একদিন রাতে ফোন করে বলে —
আমি কি তোমার একটু কাছে আসতে পারি?
তার এই কথা শুনে আমার বুকের ভিতর কেমন করে যেন উঠলো, এমন কথা এর আগে আর শুনিনি,
কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না,
আমি বললাম —
কেন সম্পর্ক অথবা বন্ধন ছাড়া এত রাতে কি করে কাছে আসবে?
ও বলল — তাহলে আমরা কি কোন বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারি?
কিছু দিন ওর সাথে কথা বলে , ওর মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনে , ওর গাওয়া গান শুনে শুনে, যাদু মাখা হাসি শুনতে শুনতে আমিও ওর প্রতি দুর্বল হয়ে পরেছিলাম, তারপর দুজনে প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ হই, দুজনে প্রতিজ্ঞা করি জীবনে যত বাধাই আসুক না কেন কেউ কখনো কাউকে ছেড়ে যাব না, মরনেও একসাথে থাকবো।
এভাবে আমাদের প্রেম খুব গভীরে চলে যায়, তখন মনে হয় কেউ কাউকে ছাড়া হয়তো বাচবো ও না,
সেদিন ফোন করে কান্না করতে ছিলো,
আমি কারন যানতে চাইলে বলে -
আসলে ও ওর বান্ধবীর সাথে বাজি রেখে আমাকে ওর প্রেমের ফাদে ফেলে ধোকা দিতে চাইছিলো,
কিন্তু আমাকে ধোকা দিতে গিয়ে সত্যি সত্যি আমার প্রেমে পড়ে যায়
তারপর দুজনে দেখা করি, ও এটা চাকুরী করে, একদিন ট্রেনিং করতে আসে একটা স্কুলে, ট্রেনিং এর ফাকে আমরা দেখা করি, দুজনে হাত ধরে হাটি , আমাকে ছাড়তে চাইছিলোনা কিন্তু ট্রেনিং শুরু হয়ে যাবে তাই যেতে হবে ওর, আমাকে রিক্সায় উঠিয়ে দিয়ে ওচলে গেল।
এভাবে মাঝে মাঝে আমাদের দেখা হতো,
ওর একটা দুঃখ ছিলো, যেটা বলে কান্না করতো,
ওর একটা চাকুরী হবে এ নিয়ে ওর বাবার খুব স্বপ্ন ছিলো, আফসোস হলো চাকুরীতে যোগদান করে বাড়ি এসে দেখে ওর বাবা আর নেই, চাকুরীর বিনিময়ে ভগবান কি ওর বাবাকে নিয়ে গেল? এসব বলে এতটাই কান্না করতো যা আমাকে ওর প্রতি আরো দুর্বল করে দিতো, প্রায় দের বছর আমাদের সম্পর্ক চলতে ছিলো, ওর একা সমস্যা ছিলো, মাঝে মাঝে পেটের ব্যাথায় কষ্ট পেত ,
একদিন সামান্য ব্যাপার নিয়ে ওর সাথে ঝগড়া হয়, সেই থেকে আমার সাথে কথা বলে না, কোন মেসেজ এর রিপ্লাই করে না,
ফোন করলেও রিসিভ করে না,,,,
কয়দিন পরে ফোন রিসিভ করে কিন্তু আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে,
কি এমন হলো যে আমার সাথে এমন করে, কিছুই বুঝতে পারিনা।
আমাকে সে আর ভালোবাসেনা বলে জানিয়ে দেয়, আমার দেওয়া সব গিফট গুলো আমাকে ডেকে আমার হাতে দিয়ে বলে তার সাথে যেন আর যোগাযোগ না করি, তাকে যেন ফোন না করি,
আমি খুব কষ্ট পাই,
আমি ওকে ভুল বুঝতে শুরু করি, ভাবি ও হয়তো অন্য কোন ছেলের সাথে প্রেম করছে,,,
একদিন ওর এক বান্ধবী আমাকে ফোন কর হাসপাতাল আসতে বলে, গিয়ে দেখি আমার ভালোবাসার মানুষটি লাইফ সাপোর্ট দেওয়া, ওর বান্ধবী বলে যে যেদিন টেষ্ট রিপোর্ট দেখে জানতে পারে যে ওর দুটু কিডনিই অনেক দিন আগেই নষ্ট হয়ে গেছে আর বেশিদিন বাচবে না সেদিন থেকেই ও আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে যাতে তাকে আমি ভুলে যাই, তার মৃত্যুতে বেশি কষ্ট না পাই,
আজ তার একদম শেষ অবস্থা, আমি তার পাশে বসি, হাত ধরি এবং বলি যে আমার একটা কিডনি দিয়ে তোমাকে বাচাবো,
ওর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিলো, আর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
আই লাভ ইউ,
এই বলেই আমার হাতেই ও শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো,
এটা সজলের জীবনের সত্যি ঘটনা ।
**লেখক সজল**
গল্প পাঠিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা থেকে কাকলি।
No comments: