জ্বীনের হজ্ব

জি, মোস্তফা

এখন এক বিংশ শতাব্দীর দশের দশক। উন্নত আধুনিক যুগ, তাছাড়া কম্পিউটারের যাদুগিরিতে মানুষ প্রায় ভুলে গেছে, জীনের অস্তিত্যের কথা ।
জীন নতুন প্রজন্মের কাছে, এখন কাল্পনিক গল্প মাত্র। যদিও দুই একজন রাতের অন্ধকারে, জীনের আগুন দেখে বলে যে ঐগুলি উল্কাপিন্ডের কারসাজি।
আল্লাহ পাক কোরআনে জীন ছুরায়, জীনের কথা বলেছে। জীন আল্লাহর বান্দা। তাদের ইনসানের আগে, সৃষ্টি করেছিল ইবদতের জন্য। সেই বিশদ আলোচনায় যাচ্ছি না। আমি ইংরেজি ১৯৮৪ সালের জানুয়ারী মাসের গভীর রাতে সাতটি জীনের আগুন দেখেছে। শুধু আমি একা নয় । পনের ষোল জন প্রত্যক্ষদর্শী হবে।
ঘটনা কিন্চিৎ না বললে নয়। বাংলা মাসটা ছিল, পৌষের মাঝামাঝি আমরা কালাই সিনেমা হলে সিনেমা দেখে ফিরছিলাম । রাত তখন একটা।সামনের দলে আমরা, ছিলাম পাঁচ জন। আমরা সর্বপ্রথম দেখি । আমাদের সামনের গ্রামের আকাশে নীল আলোর তিনটি বলয়।
ধীরে ধীরে উত্তর দিকে বয়ে চলেছে আর বলয় থেকে টর্চ লাইটের আলোর মত তীর্যক ফোকাস  বেড়িয়ে গেছে। দেখতে দেখতে বলয় গুলি ডান বাম থেকে আরও চারটি বলয় প্রকাশ পেল। তার ভিতরে দুইটি বলয় জ্বলছে আর নিভে যাচ্ছে।
এদের শেষ পরিনতি দেখার জন্য পলকহীন আকাশ পানে, চেয়ে থাকলাম। সফর সঙ্গী দুলাভাই বলল । ওদের দিকে তাকাতে নাই।
আমি বললাম ওরা যদি আমাকে আচর করে করুক। এরা আকাশের কোথায় মিলিয়ে যায় তা আমি দেখব। 
দেখতে দেখতে আগুনের ঝাক গুলি বাগইল গ্রামের উপরে চলে গেল । কিন্তু হঠাৎ করে তারা কবুতর উর্ধ্ব আকাশ থেকে । ডিগ বাজি খেয়ে , ঘুরে চালে বসে । ঠিক সেই কায়দায় , আগুনের বলয় গুলি ডিগবাজি খেয়ে নিচে নেমে গেল । আমাদের অনুমান হল বাগেইল পীরপাল নামে একটা দরগা আছে । সেখানে অসংখ্য , কেয়া ফুলের গাছ আছে। সম্ভবত বলয় গুলি ওখানে নেমে পড়েছে।
আমার স্বচক্ষে দেখা , আর  একটি ঘটনা ইষৎ আলোচনা করে আমি মুল কাহিনীতে চলে যাব। পাঠক পাঠিকা , পড়ে যেতে থাকুন কিভাবে জীন হজ্ব করল। 
আমরা গ্রামের ছেলেরা মিলে , প্রতি বছর ভাদ্র মাসে পাঠকের ইয়ার্সেল করতাম । কার্তিকের শেষে, পাঠক মুক্তি দিতাম। প্রাথমিক বিদ্যালয় বারান্দায় ভির একদেঢ় মাস, ইয়ার্সিল হত । গ্রামের মানুষ ‍দিনের বেলা, কর্মে ব্যস্ততা থাকায় । রাতে একত্রিত হয়ে ইয়ার্সিল করতাম। 
একরাতের ঘটনা , আমি ছিলাম প্রমোটার (বই মাষ্টার) আমার ও পাঠ অভিনয় ছিল । ইয়ার্সেল চলা কালিন , প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে গিয়ে । বইটি অন্য একজনকে , প্রমোটিং করতে দিয়ে । আমি মাঠের মধ্যে গেলাম। 
প্রাত কৃত সমাধানের পর , স্কুলাভিমুখে । ফেরার পথে লক্ষ্য করলাম। যে কক্ষের বারান্দায় ইয়ার্সিল হচ্ছে । সেই কক্ষের পূর্ব উত্তর কোণ দিয়ে নীল আলো বেড়িয়ে গেল, একটা আম গাছের উপর দিয়ে। ভাবলাম, হয় তো চোখের ঘোর দেখলাম। কিয়দংশ যেতে জনৈক এক ব্যাক্তিকে বট বৃক্ষের নিচে বসে থাকা, দেখে জিজ্ঞাসা করলাম। 
আপনি কিছু দেখলেন? জবাবে উনি বললেন। হ্যা বাবা জীনের আগুন দেখলাম । তোমরা ইয়ার্সিল কর, তোমাদের কিছু হবে না । তারপর আমি স্কুলে উপস্থিত হয়ে, ছেলে গুলিকে বললাম । 
তোমরা সকলেই একটু চুপ কর। সবাই নিঃচুপ হলে, আমি বললাম তোমরা কি কোন , আগুনের ঝলক দেখলে ? জবাবে তিন জন বলল । হ্যা একটা আলোর ছটা , গায়ে লা্গলো । কিছুক্ষন পর আমার ছোট ভ্রাতা, ও তার সংগি এসে বলল তোমরা নাটক বন্ধ কর । এই ঘর থেকে একটা আগুন বের হয়ে আকাশ দিয়ে উড়ে চলে গেল ।
এতক্ষন আমার সত্যতা , যাচায় হয়ে গেল । এই কক্ষ ছেড়ে জীন চলে গেল। 
এখন আমাকে কেউ , অবশ্য বলতে পারবেনা যে, আমি চোখের ঘোর দেখেছি। বা কোন ফ্রাইংসশর দেখেছি। বর্তমান যুগের জ্ঞানিগুনি, জীনের আবির্ভাবকে ! ফ্লাইসশার বলে। যে অন্য গ্রহকে থেকে কোন প্রাণি চখের পলকে পৃথিবী ভ্রমন করে যায়। মানুষের মধ্যে যত ধর্ম আছে , জীনেদের মধ্যে ততো ধর্ম আছে। আমি এখন যে জীনের কথা বলব, তার ধর্ম মুসলিম । ভাবতে আমিও প্রথম, অবাক হয়ে ছিলাম। জীন হজ্ব করল! 
বিগত শতাব্দির আশির দশক হবে। রমাজানের রোজা শেষ, সকাল আট টায় ঈদগা মাঠে গেলাম। ঈদগা মাঠ আমার গ্রাম থেকে হাফ কিলো পশ্চিমে । বাগইল গ্রামের , চন্দর পুকুর পাড়ের উপড়ে। এখানে মোহাইল , বাগইল,ও থল গ্রামের মুছল্লিগন ঈদের নামাজ পড়ে থাকেন।
যথা সময়ে ইমাম সাহেব, মাঠে উপস্থিত হলেন । সিয়াম সাধনা সম্পর্কে ছোট খাট বক্তারা বক্তব্য পেশ করলেন। এবার ইমাম সাহেবের বক্তব্য দেবার পালা । এমোতবস্তায়, মোহাইল গ্রামের এক হাজী । আবু হেলা উঠে দাঁড়ালেন।
আলহাজ আবু হেনা, ইমামের অনুমতি নিয়ে সালাম ‍দিয়ে বলতে আরম্ভ করলেন। আপনারা সবাই চুপ করুন। আপনারা জানেন আমি গত বছর হজ্ব করেছি। একটা হাজির অনুরোধে । আজ আমি কিছু কথা , বলতে দাঁড়িয়েছি। আমি বিশেষ করে , থল গ্রামের মানুষের প্রতি , লক্ষ করে বলছি। আমি কোরান থেকে , বা হাদিস থেকে কিছু বলব না । চির সত্য বাস্তব একটা গল্প বলব। আসা করি  আপনারা , আমাকে কেউ ভুল আর অবিশ্বাস করবেন না।
পাক জায়গায় দাড়িয়েছি এক বিস্ময় কর , ঘটনা বলতে। আমি মিনার তাবুতে ঘুমিয়ে ছিলাম। রাত পোহালে যে দিন আরাফা যাত্রা হবে। সেই দিন সকালে আমি , তাবু থেকে বেড় হয়ে দাাঁত মেছওয়াক করছি।
এমন সময় সাদা ধবধবে জুব্বা গায়ে , মাথায় পাগড়ী পড়া লম্বা জোয়ান গায়ের রং ফর্সা এক হাজি সাহেব। আমার সামনে দাড়ালেন । আমাকে সালাম ‍দিলেন। আমি সালামের জবাব দিলাম । এবং মোছাহাবা করলাম। তারপর বললাম। ভাই আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না । দেখছে তো বাংলাদেশি । তা আপনি কোন মাল্লুমের অধিনে আছেন ? আপনার পরিচয় বলবেন কি?
 উনি বললেন, আমি এই মাত্র মক্কায় এসে, পৌছিলাম্ আর আমি কোন মাল্লুমের আওতায় নেই। লোকটার কথা শুনে আমি , অবাক হলাম । কোন মাল্লুমের অধিনে নেই । অথচ আজ কে , বাংলাদেশ থেকে এসেছে।
আমার হাতের ব্রাস,এমনিতে মুথে আটকে গেল । আমি লোকটার প্রতি বাক রূদ্ধ দৃস্ঠে তাকিয়ে থাকলাম। লোকটি আবার বলতে লাগলো । আমি আপনার বাড়ির কিছু খবর দিতে এসেছি। 
আমি এবার বিস্ময়ে হতবাক হলাম। ভা্বলাম স্বপ্ন দেখছি না তো ! আমার বাড়ির খবর একজন মানুষ । বাংলাদেশ থেকে সুদুর আরবের মক্কাতে এসে  দিবে । এ এক অবাস্তব কান্ড। বিশ্বাসের কল্পনা , বৈ কিছুই নয়। আমি স্বম্বিত ফিরে পেয়ে। লোকটাকে জিজ্ঞাসা করলাম। ভাই আপনি আমাকে কিছুক্ষনের জন্য হলেও নির্বাক করে দিয়ে ছিলেন। সত্যিকরে বলুন তো আপনি কি হজ্ব, করতে এসেছেন? 
লোকটি বললেন হ্যাঁ । তবে আমি বুঝতে পেরেছি , আপনার মনের অবস্থা ।
আপনাকে আমি কিছুই লুকোবনা। সবই বলব তার আগে আপনার বাড়ির খবর টা শুনুন। বাড়ি সকলেই ভাল আছেন্ তবে , আপনার মেজ ছেলেটার শরিরে হাম উঠেছে । আর একটা লোক , জমি পত্তনের টাকা ‍দিতে এসে । আপনার বিবির সাথে বাকবিতন্ডা করল। 
পরে তাও মিটে গেছে । আমি ভাবলাম লোকটা , নিশ্চয় ফেরেস্তা । তার পর লোকটা বললেন । আমি জাতিতে জীন । আমার নাম ওয়াজেদ আলী  । আমি থলের জামে মসজিদে থাকি । মাঝে মধ্যে বাগইল ,  মোহাইল , মসজিদে ও থাকি । তবে আপনার নিকট , আমার অনুরোধ রইল। আপনি থলেন মানুষদের একটু মেহের বাণী করে বলবেন , তারা যেন মসজিদের আঙ্গিনায় , হই হুল্লর না করে । আর যাদুগীর না বসায়।  আমার নামাজের অসুবিধা হয় । আমি কৌতুহলের বসে বললাম , ভাই আপনি যে বললেন মক্কায় , আজাকে এই  মাত্র আসলেন । তা আপনি কোনদিন আরবের উ্দ্দেশ্যে রওয়ানা  দিয়েছেন ?
তখন উনি একটু মুচকি হেসে বললেন । থল মসজিদ থেকে মক্কায় আসতে আমার পনের মিনিট সময় লেগেছে। 
কথা শুনে আমি থ হয়ে গেলাম এক সময় লোকটি আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল।
 আমি জহ্ব ব্রত, পালন করে। বাড়িতে ফিরে এসে , বিবিকে জিজ্ঞাসা করলাম। 
ছেলের হামের কথা । এবং জমি পত্তনদারের টাকা দেওয়ার কথা । তখন এসব কথা সত্যতা আমার স্ত্রী স্বীকার করলেন। 
উপস্থিত ভাই সকল , আমার কথা বলা এখানেই শেষ হল।আবু হেনা স্বস্থানে , বসে পড়লেন। আমরা কিছুটা হলেও আতংকিত হলাম। 
তারপর অনেকে নামায পড়ার পর । বাড়ি ফেরার পথে , বলা বলি  করতে লাগল। কেউ কেউ জীনের নামায পড়া দেখেছেন। কেউ কোরআন পড়া শোনেছেন। কেউ আবার মসজিদে নীল আলো জ্বলা দেখেছেন। 
তা আজ আবু হেনার কথায় সত্যিতে পরিণত হল। 


লেখক পরিচিতিঃ- জি, মোস্তফা ১৩৭১ বঙ্গাব্দ ৮ ই আশ্বিণ , জয়পুর হাট জেলার কালাই থানার অন্তর্গত থলগ্রামে জন্ম গ্রহন করেন।
সমাপ্ত
জ্বীনের হজ্ব জ্বীনের হজ্ব Reviewed by Unknown on 10:09 AM Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.