ভাই সাব

লেখক - জি,মোস্তফা

ভাই সাব কথাটি ঠিক করে বলতে গেলে, বলা হয় ভাই সাহেব। আঞ্চলিকতা ভেদে, আমাদের প্রাাচিন ভাষার অনেক পরিবর্তন হয়েছে । আমরা খালুকে ডাকতাম দামান । ফুফুকে বুটি বড় বাবকে জ্যাঠো।
মেয়েরা ভগ্নিপতিদের মিয়া ভাই বলে ডাকত। আবার কেউ কেউ বাবাকে নানান কায়দা কসরদে ডাকতো। যেমন বাপো, বা, আব্বা ইত্যাদি ।
আজকে আধুনিক যুগের ছোঁয়ায় সেই সব ডাাক প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছ। আমার খালাতো ভগ্নি পতি আব্দুল বারীক । আমার বাড়ির পাশে তার বাড়ি। আমার বোনের নাম সারে বানু। ভাই বোন হলেও আমি তার সন্তানের বয়সের মত । তার স্বামীকে ছোট কালে ভাই সাব বলে ডাকতাম।
এখন দুলাভাই বলে ডাকি , একদিন বুবু সারেবানু এসে আমাকে বলল , তোর দুলাভাইতো আবার তাস খেলা শুরু করেছে। ইতি পূর্বে তাসে তো সংসারের অনেক ক্ষতি হেয়েছে। এখন মেয়ে জামাই হয়েছে সম্মান কি থাকে?
তোরা আমার ছোট ভাই এর একটা কিছু বিহিত কর। নইলে এই বয়সে ওর ঘর ছেরেে আমি চলে যাব।
আমি বুবুকে বললাম তুই চলে যা, আজ রাতেই আমি এর একটা সুরাহা করব।
দেখবে ভাই সাব আর জীবনেও তাস খেলবে না । তখন অগ্রহায়ণ মাস শীতের সন্ধ্যা বেলা আমিও আমার দুই সহ পাঠিকে ডাকলাম । তারা উভয় আমার মামাতো ভাই বটে।
যথা  রিতী আমাদের পরামর্শ হয়ে গেল । আমরা রাতের অন্ধকারে পাড়ায় ঢুকে সদ্দ্যই টেনিং প্রাপ্ত তিন জন আনসার বাহিনীর খাকি জোষাক , বেল্ট বুট সংগ্রহ করলাম। মটর সাইকেলের হিলমেট, বেতের চক্কর আলা ছড়ি সব ঠিক ঠাক করে । আমি গাজিউল ,সাঈদ, আমার বড় ভাই রফিকুল , গাজিউলের বড় নজরুল ছোট সুজাউল, সাঈদের কনিষ্ঠ সাহারুল দূর গ্রামের আত্বীয় আজিজুলকে সংগে নিয়ে যৌথ পরামর্শ করলাম ।
অবশেষে গাজি , সাঈদ আমি বেড়িয়ে পরলাম ভর দুপুর রাতে । কাকে পুলিশ সাজাব কিং কর্তব্য বিমূঢ় তবে কি আমরা পুলিশ সাজবো !
না, না, না, কথার আঞ্চলিকতার ধরা পড়ে যাব। ভেবে পথ পেলাম । স্কুলের বারান্দায় বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ধান কাটা কাজের লোক শুয়ে আছে।
গেলাম সেখানে বললাম আমাদের কথা । কিন্তু বিদেশ ভেবে পুলিশ সাজতে কেউ রাজি হল না। একজন বলেই ফেলল , ভাই আমদের গ্রামে এক লোক পুলিশ দেখে ভয় করত । তাকে ভয় দেখাবার জন্য দুই লোক পুলিশের মত করে ডাকছিল । আর বলছিল আমরা থানা থেকে এসেছি। লোকটি তখন ভয়ে দৌড়ে পালাতে গিয়ে । এক গাছের সাথে ধাক্কা লেগে মারা যায়।
ভাই আমরা বিদেশি মানুষ এখানে আমাদের বাপ , মা নেই । একটা কিছু হয়ে গেলে তোমাদের তো দেখা মিলবে না । শেষে আমরা জেলে যাব। তবে জ্ঞানের দিক দিয়ে কথা গুলি মন্দ নয়। কিন্তু আমাদের একাজ করতে হবে। হঠাৎ সাঈদ কমলা লোকের প্রতি চড়াও হয়ে গেল।
বলল আজকে সবার কাঁথা পানিতে ভিজিয়ে দেব। তখন তিন জন রাজি হল। আমরা তাদের ভবিষ্যৎ অসুবিধার ভার কাঁধে নিলাম ।
যথারিতী মসয়ে আমরা তিনজন পুলিশ সাজিয়ে মোতায়েন করলাম। এবার অপেক্ষার পালা সময় গুনছি। এক সময় ভিতর বাড়ি থেকে কাসেদ এসে আমার কানে ফিস ফিস করে বলল। তোদের কথা মত সব কাজ ঠিকঠাক হয়েছে। তোরা এখন যেতে পারিস ।
আমি তখন তাকে একটু আস্তে করে বললাম । কপাটে খিলটা একটু করে দেয়া আছে তো ?
এবার আমরা পুলিশ বাহিনীকে অপারেশনে পাঠিয়ে পশ্চাদ অনুসরণ করতে লাগলাম । আমার হাসি কাল হয়ে দাড়াল কিইনা কান্ড ঘটে।
মনেতে উচ্চ চাপ সৃষ্টি করে সাঁই সাঁই শব্দে হাঁসতে লাগলাম। সেকিন্দার নামের কামলাকে সেকিন্ড অফিসার সাজিয়ে ছিলাম।
তার মাথায় হিলমেট হাতে বেতের ছড়ি ছিল। কন্সটেবল দুই জনের কাধে ছিল। পরিত্যাক্ত টিউবলের ফিল্টার দিয়ে বানানো কল্পিত ট্রেংগান ।
এবার সেকিন্দার অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে ঘরের দরজা খুলে দিতে বলল। মুহুর্তে ঘরের কোলাহল বিষাদে পরিণত হল।
কোন সারা শব্দ নেই নীরব রজণীর কক্ষ যেন মানব শুন্য । সুতরাং সেকিন্ড অফিসার তার গাল মন্দ কথা আর অনবর্ত কপাটে লাথি মারতে থাকলো ।
আমরা আশ্চার্য্য হলাম !তবে কি কপাটে  খিল  শক্ত করে লাগিয়ে দেওয়া আছে? ভাবা বেগের ইতি না টানতেই শেষ লাথির তোড়ে কপাট খুলে গেল। আমরা দুর থেকে আবছা আলোয় যতটুকু দেখলাম ।
ভাইসব জানুর উপর দুই হাত বিছিয়ে । উর্ধ্ব মুখে পুলিশের পানে হতারশ চিত্তে তাকিয়ে আছে।
হাতের তাস গুলি লুকিয়ে রাখবার তাল পায়নি। ঘটনা ষিয়ে অনেকে অবগত থাকলেও । ভাই সাব এর মুহুতটা ছিল হৃদয় বিদায়ক ।
জীবনে অপরাধি হয়ে পুলিশের রোষে পড়েনি। সেকিন্ড অফিসার টেনে হিচড়ে পাঞ্জাবির কলার ধরে  বাহিরে নিয়ে এল।
শোনা গেল ভাই সাবের মুখ থেকে বেসামাল কথা বলছে ওসিন স্যার লুঙ্গি খুলে গেছে। একটু পরে নেই আমার বাপ দাদার চৌদ্দ গোষ্ঠিতে চোর নেই আমার ছোট ভাই উকিল ।
খবরদার আমার হাতে দড়ি লাগাবেন না। সেকিন্ড অফিসার ইশারা করতেই এক কন্সটেবল বেত্রাঘাত করল।
ভাইসাব এবার চিৎকার করে উঠল । বলল ওরে বপুরে মরে গেলাম রে । এই কন ধরে বলছি তওবা করছি স্যার আর জীবনেও তাস খেলবো না । আমাকে ছেড়ে দিন। সেকিন্ড অফিসার বলল দাড়া ব্যাটা । থানাতে যেয়ে শশুড় বাড়ি যাবিনি।
এই বলে হাট পুকুর পাড়ের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল।কারন সেই খানে মটর সাইকেল দ্বার করানো আছে। আমরা আড়াল থেকে সাহারুলকে মধ্যস্থতার জন্য পুলিশের নিকট পাঠালাম ।
এর মধ্যে রাস্তা চলতে ভাইসার । তিন বার প্রসাব করার অনুমতি নিয়ে প্রসাব করেছে। সাহারুলের কথপ কথনে অফিসার  ওয়ান থাউজেনের বিবিময়ে ভাই সাব কে ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছে।
সেই কথা ভাই সাবের কানে দিতে সাহারুল পুলিশদের বলল আপনারা একটু সরে যান। আমি ভাই সাবের সাথে আলোচনা সেরে নেই।
পুলিশেরা কিয়দংশ সরে দাড়ালে সাহারুল ভাইসাবের কানে চুপে চুপে কান কথা বলে ., বলল , দৌড় দিয়ে পালাতে পারবে। আর ওয়ান থাউজেন তোমার বাড়িতে যেয়ে আনব। ভাইসাব বলল যাওয়া হবে তো ?
সাহারুল বলল হ্যা । অমনি ঝড়ের বেগে ভাইসাব দৌড় ধরল। তার পর বাড়িতে এসে প্রাচির টপকিয়ে শয়ন কক্ষের কপাট চাপড়াতে লাগল।
বুবু দরজা খুলে বলল হাফাচ্ছ যে অ কি হয়েছে । চুরি করতে গিয়েছিলে নাকি? বুবুর মুখ চেপে ধরে বলল চুপ। বাহিরে পুলিশ আমি পালিয়ে এসেছি। আমাকে তাস খেলতে ধরেছিল।
শক্ত করে কপাটে খিল লাগিয়ে দাও।
এতখনে আমরা পুলিশ ‍রূপি কামলাদের বিদায় করে । ভাইসাবের হাল হকিকত দেখার জন্য সাহারুলকে সংগে করে ভাই সাবের বাড়ির পিছনে যেয়ে উপস্থিত হলাম। সাহারুলকে ভিতরে পাঠিয়ে আমরা জানালার ওঁৎপেতে তাকিয়ে থাকলাম্
 শুনতে পেলাম সাহারুল বলছে । ভাইসাব আমি আজ বিকেলে থানায় গিয়ে ছিলাম । পুলিশ অবশ্য বলল।যে আজ আমরা থল গ্রামে যাব আসামি ধরতে । ভাই সাব হাফ ছেড়ে বলল। হায়রে ভাই সেই কথা তুই আমায় আগে বলবিনা। তাহলে কি আজ আমি তাস খেলতে বসি।
ভাগ্যে আজ তুই ছিলি। নইলে থানায় যেতে হত। এবার সাহারুল বলল যা হবার হয়েছে থাক সেই সব কথা । ভাইসাব ওয়ান থাউজেন দিতে চেয়েছিলে দাও।
আমি পুলিশকে দ্বার করে রেখে এসেছি। ভাইসাব বলল হ্যা ভাই নিয়ে যা। ঐ তো টেবিলের উপর রেখেছি । সাহারুল বলল কই ভাই সাব ? টেবিলের উপর কাঁথা ছাড়া তো কিছুই নজরে পরছেনা ।
ভাইসাব বলল আরে তুই বল্লি দেখে তো আমি। এই শীতের তোর বোনকে বলে নতুন কাঁথায় বেড় করে রাখলাম। সাহারুল বলল ভাইসাব ওয়ান থাউজেন কথার মানে বোঝ ?
ভাইসাব বলল কেন ? কাঁথা না । কাঁথার কথাই তো বল্লি ।
শোনা মাত্র ভিতর বাহিরের সবাই আমরা হেঁসে কুটি কুটি।
                   


 সমাপ্ত
ভাই সাব ভাই সাব Reviewed by Unknown on 6:06 PM Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.